কোহিনুর প্রীতি, লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
মোবাইল ফোনে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয়ে পালিয়ে বিয়ে করে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন লাকসামের মেয়ে জামেলা আক্তার বৃষ্টি ও নোয়াখালীর ছেলে আলাউদ্দীন। বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতেই স্ত্রী বৃষ্টিকে হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী আলাউদ্দীন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে লাকসাম থানা পুলিশ জানায়, ১০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) গভীর রাতে স্ত্রী বৃষ্টিকে হত্যা করে তার লাশ বাবার বাড়ি লাকসাম পৌরএলাকার পশ্চিমগাঁও কলেজ পাড়া একটি দোকানের পেছনে ফেলে রেখে বৃষ্টির ভাইকে ফোন করে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী আলাউদ্দীন। আলাউদ্দীন পালিয়ে গেলেও তার দুই সহযোগীকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ আটক করেন স্থানীয় জনতা।
খবর পেয়ে পুলিশ বৃষ্টির লাশ উদ্ধার করে ও জনতার হাতে আটক দুইজনকে থানায় নিয়ে যায়। নিহত জামেলা আক্তার বৃষ্টি (১৮) পৌরএলাকার পশ্চিমগাঁও কলেজপাড়ার রিকশাচালক জামাল মিয়ার মেয়ে এবং ঘাতক আলাউদ্দিন (২৭) নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদের ছেলে।
এদিকে আটককৃতরা হলেন, নোয়াখালী জেলার চাটখিল এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বেলায়েত হোসেন ও ভাড়া বাসার আরেক ভাড়াটিয়া আশিকুর রহমান।
নিহত বৃষ্টির বড় ভাই মোহাম্মদ খোকন মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাত ১০ টায় দিকে আলাউদ্দীন ফোন করে বলেন বৃষ্টি মারা গেছে। এরপর রাত সাড়ে ১২ টায় আলাউদ্দীন ফোন করে বলে আপনাদের বাড়ির সামনে একটি দোকানের পিছনে লাশ রাখা আছে। ওইখান থেকে বৃষ্টির লাশ নিয়ে যান। এ কথা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি দ্রুত গতিতে একটি সিএনজি চলে যাচ্ছে। আমি চিৎকার দিলে এলাকার লোকজন দৌঁড়ে গিয়ে সিএনজিসহ দুইজনকে আটক করে। এ সময় পালিয়ে যায় বৃষ্টির ঘাতক স্বামী আলাউদ্দীন। এরপর দোকানের পেছনে বিছানা চাদর পেঁচানো বৃষ্টির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। খবর পেয়ে পুলিশ আমার বোনের লাশ উদ্ধার করে এবং সিএনজিসহ দুইজনকে আটক করেন। আমার বোনকে তারা হত্যা করে পেলে রেখে যায়, আমি এ হত্যার বিচার চাই।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস পূর্বে লাকসাম পৌরএলাকার পশ্চিমগাঁও কলেজপাড়ার অটোরিকশা চালক জামাল মিয়ার মেয়ে জামেলা আক্তার বৃষ্টির সঙ্গে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদের ছেলে আলাউদ্দিনের মোবাইলে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। এরপর তারা পরিবারের অজান্তে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে বৃষ্টি ও তার স্বামী আলাউদ্দীন নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। মাঝে মধ্যে বড় ভাই খোকনের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নিতেন বৃষ্টি। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টির স্বামী আলাউদ্দীনসহ কয়েকজন যুবক মিলে বৃষ্টিকে হত্যা করে লাশ বিছানা চাদরে পেঁচিয়ে বৃষ্টির বাড়ির কাছে পেলে রেখে যায়। এসময় সিএনজি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় জনতা সিএনজিসহ দুই জনকে আটক করলেও ঘাতক পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের ধারণা বৃষ্টিকে হত্যা করে স্বামী আলাউদ্দিন বাঁচার জন্য রাতে তার শশুর বাড়ির রাস্তার পাশে লাশ রেখে যায়।
লাকসাম থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, তরুণীর মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক, রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বুধবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এছাড়াও সিএনজিচালক বেলাল ও সহযোগী আশিক নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।