মোস্তফা খান খান, স্টাফ রিপোর্টার:
নরসিংদীর রায়পুরায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে জমির মূল্য পুণঃ নির্ধারণসহ অফিসে হয়রানি বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা।
শুক্রবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১১ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ নীলকুঠি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। পরে তাঁরা অধিকার আদায়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। ফলে মূহুর্ত্যের মধ্যেই দুরদুরান্ত থেকে আগত দুপাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এসময় প্রায় ১৫ মিনিট পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় মহাসড়ক থেকে তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়। মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক জমির মালিক ও তার পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ওমর ফারুক, মজিবুর জাহারী, মুছলেহ উদ্দীন হাজারী, দেলোয়ার ভুইয়া, মেশারফ হোসেন ভূইয়া, হানিফ মিয়া সহ আরো অনেকে।
বক্তব্যে তারা বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করণ প্রকল্পে সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই জমির বর্তমান দরের চেয়ে বহুগুণ কম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে জমির মালিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অধিগ্রহণের টাকা দিয়ে অন্যত্র জমি কেনা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জমি হারিয়ে অনেককে ভূমিহীন হতে বসেছে। জমির মূল্য পূণ:নির্ধারণ করাসহ অফিসে ঘোষ বা দালালের দৌরাত্ম্য ছাড়া জমির ন্যায্য মূল্য চায় তাঁরা। না হলে জীবন দিয়ে দিবে কিন্তু বাপ দাদার জমির এক অংশ ছাড়বে না বলে হুশিয়ারি করেন।
মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, কুকুর মারা মৌজায় ভিটি ৭১ হাজার টাকা শতাংশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ বর্তমান বাজার মূল্য আছে প্রতি শতাংশে ১০-১৫ লাখ টাকা। যারা অধিগ্রহণের দায়িত্বে আছেন তাদেরকে খুশি করতে না পারলে মিলছে না ন্যায্য মূল্য।
জমির মালিক ও মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ৪৫ বছর আগের রেকর্ডে লেখা নাল এখন আর নাল নেই। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সময় পুরনো রেকর্ডের নাল দেখে শতাংশ প্রতি ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার টাকা। অথচ ভৈরবের নিকটবর্তী এসব এলাকায় রোডের পাশে নাল চিহ্নিত জমির বর্তমান মূল্য তার ১০-১৫ গুন বেশি। আমার পাশের জমিতে একটি ছাপড়া তৈরি করে সেই জমিকে ভিটা দেখিয়ে বাড়িসহ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আর আমার জমি নাল হয় কিভাবে? তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন- প্রতিটি জমির মালিক ১০ শতাংশ ঘুষ দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়। টাকার বিনিময়ে নাল হয়ে যায় ভিটা আর টাকা না দিলে বসতি জমি হয়ে যায় নাল। এখানে সার্ভেয়ার ও ইঞ্জিনিয়াররা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কর্তাদের ম্যানেজ করে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা ন্যায্য মূল্য পেলেও সম পরিমাণ টাকা মধ্যস্থতাকারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে। এলাকায় কিছু দালালের মাধ্যমে তারা টাকার বিনিময়ে জমির মূল্য বাড়িয়ে দিবে বলে প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলেই জমির মালিকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মাহমুদাবাদ নামাপড়ার মোসলেহ উদ্দিন হাজারী বলেন- আমাদের এলাকার জমির দলিল দেখে আমাদেরকে ন্যায্য মূল্য দেওয়া হোক। যেই নাল জমি রেজিষ্ট্রেশন করতে প্রতি শতকে ৪ লাখ টাকা দিতে হয় সেই জমির ক্ষতিপূরণ কিভাবে ৪৪ হাজার আর ৭০ হাজার টাকা শতাংশ ধরা হয়?
মজিবুর রহমান বলেন- ৪ লাখ টাকা শতক জমি কিনেছি কয়েক বছর আগে। আমার কাছে তার দলিলও আছে। কিন্তু এখন তা নাল হিসেবে ৪৪ হাজর টাকা শতক ধরা হয়েছে। এই টাকায় আমরা এলাকায় কোথাও কোনো জমি কিনতে পারব না।
ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন ভূইয়া এবং দেলোয়ার ভুইয়া বলেন- আমাদের শত বছরের পুরনো বাড়ির শুধুমাত্র ঘর বাদে বাকি অংশ নাল লেখা হয়েছে। যা অমানবিক। নীলকুঠি বাসস্ট্যান্ডে যেখানে ২০ লাখ টাকা শতক জমি পাওয়া যায় না সেখানে আমাদের বাড়ির গর্তকে ডুবা দেখিয়ে মাত্র ১১ হাজর টাকা শতক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন- ১০ বছর আগে নীলকুঠি বাসস্ট্যান্ডের প্রাণকেন্দ্রে আমার দ্বিতল বাড়ি ও দোকানকে শুধু বিল্ডিং বাদে বাকি অংশের নামমাত্র মূল্য দেখানো হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমি কোথায় বাড়ি কিনব?
তারা আরও বলেন, মোট ৮৬ জন জমি মালিকের জমি অধিগ্রহণ করে। যার অর্থ এখনো বেশির ভাগ পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, জেলা প্রশাসকের কাছে এক মাস আগে লিখিত দাবি পেশ করা হলেও কোনো সুরাহা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এ বিষয়ে তাঁরা দ্রæত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।