আরিফুর রহমান স্বপন, কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লার লাকসামে সন্ত্রাসী হামলায় আহত ইফতেখার অনিক (২৪) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৮ জুন) সন্ধায় মারা গেছেন।
লাকসাম পৌরসভা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতেখার অনিক নিজ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়ে আট দিন হাসপাতালে থাকার পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (লাইফ সাপোর্ট) থাকাবস্থায় বুধবার মারা যান তিনি।
লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনূছ ভূঁইয়া জানান, গত ২১ জুন বিকেলে লাকসাম পৌরশহরের দক্ষিণ বাইপাস এলাকায় পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতেখার অনিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম সৌরভ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীর হোসেনের ওপর ছাত্রদলের কতিপয় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ওই সময় তারা ছাত্রলীগ নেতা অনিক, সৌরভ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বুকে ও পাঁজরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতদের প্রথমে লাকসাম ফেয়ার হেলথ হসপিটালে এবং পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত ইফতেখার অনিকের অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (লাইফ সাপোর্ট) রাখা হয়েছিল। সেখানে বুধবার সন্ধ্যায় অনিক মারা যায়। বাকি দুজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তাদের অবস্থাও আশংকাজনক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ঘটনার পরদিন অনিকের বাবা মনির আহমেদ বাদী হয়ে এজাহার নামীয় ছয় জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে লাকসাম থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে এজাহার নামীয় আসামীরা হলেন- ঘটনার মূলহোতা লাকসাম পৌর এলাকার গাজীমুড়া গ্রামের সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিমের ছেলে ছাত্রদল নেতা সাইমুন রহমান রকি, একই গ্রামের চাঁন্দু মিয়ার ছেলে শাকিল, ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে জিল্লুর রহমান, জিন্নতের রহমানের ছেলে সাংবাদিক মশিউর রহমান সেলিম, পেয়ারাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে তাজুল ইসলাম খোকন, একই গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন মিলন।
এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন আসামীর কথা উল্লেখ্য রয়েছে এজাহারে। ঘটনার পরপর আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে লাকসাম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানিয়েছেন।
এদিকে অনিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোটা লাকসামে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ যেন আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিহত অনিক উপজেলার উত্তরদা গ্রামের মনির আহমেদ ও স্কুল শিক্ষিকা রাবেয়া বেগমের ছেলে। তিনি বাবা মায়ের সঙ্গে পূর্ব লাকসাম এলাকায় বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) লাকসাম পৌরশহরে ও গ্রামের বাড়িতে দুইদফা জানাযা শেষে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
অপর দিকে লাকসাম পৌরসভা ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখার অনিকের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।