প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
‘১০বছরে আমার বাড়ি চার বার নদী ভাঙলো, এবারও বাড়ি সরাতে হচ্ছে। ১একর জমি ছিল, ভাঙতে ভাঙতে চার শতক জমির উপর ঘর তুলছি, তাও নদীতে চলি গেল। এলা কোন্টে গিয়ে থাকমো আল্লাহ্ই জানেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াশাম গ্রামের বানু মামুদ(৭০) নামের এক বৃদ্ধ এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সইগ নদীত ভাসি গেইচে। এলা কোন্টে থাকমো? পাগলা তিস্তা নদী হামার বাড়িঘর ভাঙ্গি নিছে।’
দইশো গজ উত্তরে গিয়ে দেখা গেল আরও ভয়াবহ চিত্র। একদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্রমিকরা বালু বস্তা ভর্তি করে ফেলছে। অন্যদিকে নদীর বিনাসী খেলায় ভেঙে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীরা ভাঙনকবলিত পরিবারের ঘরের চাল, বেড়াসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র এলাকার মানুষজন সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই এরাকায় প্রায় ৫০টি পরিবারের ঘর বাড়ি তিস্তার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অসহায় পরিবারগুলো অপরিচিত কাউকে দেখলে হয়তো কোন আশ্বাসের আসায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তিস্তা নদীর কিনারে খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতলভবন ও কয়েকটি মসজিদ। ঝুঁকিতে রয়েছে এ গুলো প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বললেন, উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াশাম, চর নাখেন্দা, বুড়ির হাট, চর বড়দরগা গ্রামের ওপর দিয়ে এখন তিস্তা নদী প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তো এমনিতেই ভাঙে কারন হলো নদীর গভীরতা কম।
চর নাখেন্দার ৫ নং ওয়ার্ড সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীটি কখন কী আচরণ করে বলা খুব কঠিন। কোনো অনুমানই করা যায় না, আমি সরকারের কাছে জোড়দাবী জানাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের।
৮ নং ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ (মামুন) বললেন, পাশেই ৩ টা গ্রাম ছিল চরগতিয়াশাম, চর খিতাবখা, চর নাখেন্দা, চর বড়দরগা, কয়েক দিনেই পুরো গ্রাম গুলো নদীতে চলি গেইচে। পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ছে। প্রতিবছর যেভাবে বাড়িঘর ভাঙ্গছে, কত আবাদি জমি যে নদীতে গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান হয়তো সরকারের কাছেও নেই । প্রতিবছর ১ থেকে ৩ হাজার ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । লাখ লাখ গাছ ভেসে যাচ্ছে তিস্তা নদীতে। বলতে গেলে ক্ষয়ক্ষতি শত শত কোটি টাকা। এ অবস্থায় তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান, ব্যাংকার সাজু সহ তিস্তা পাড়ের হাজারো সাধারণ মানুষ রংপুরে খরস্রোতা তিস্তা নদী খননের দাবি তোলেন। কিন্তু অদ্যবধি কোন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। মহাপরিকল্পনা শুধু তিস্তা পাড়ের মানুষের শান্তনা হয়ে রয়েছে। কবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে কেউ যানে না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে এভাবে নদী ভাঙন ঠেকানো যাবে না। কিন্তু টুকি টাকি ভাঙন বালুর বস্তা দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।