মোঃ সাইফুল ইসলাম রায়হান , রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী প্রশস্তকরণের জন্য এভাবে খুঁড়ে রাখা হয়েছে সড়ক। এতে যান চলাচলে হচ্ছে ভোগান্তি। ছবিটি গত বুধবার বানেশ্বর-ঈশ্বরদী আঞ্চলিক মহাসড়কের চারঘাটের সরদহ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। পাথর-বালু যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়ছে। এতে উড়ছে বালু ও ধূলিকণা। কোথাও এক থেকে দুই ফুট গভীর করে শেড তৈরি করা হয়েছে। এক লেন ধরে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
এ চিত্র রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের চারঘাট উপজেলার প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে। তীব্র গরম ও দাবদাহের মধ্যে সড়কে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরা। এর মধ্যেই সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গত এক মাসে প্রাণ হারিয়েছে দুই ব্যক্তি, আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে চারঘাটের নাগরিক কমিটির সদস্যরা রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। সওজ কর্মকর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন কাজ দ্রুত শেষ হবে। অথচ তা না করে সময় বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাজশাহী সূত্রে জানা যায়, ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে চারঘাট-বাঘা-নাটোরের লালপুর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত এই সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। বর্তমানে সড়কটি রয়েছে ১৮ ফুট চওড়া। নতুন সড়ক হবে ৩৪ ফুট চওড়া। এ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। মেয়াদ শেষ হতে ৭ মাস বাকি; অথচ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। সাতটি প্যাকেজে সাতজন ঠিকাদার এই সড়কের কাজ বাস্তবায়ন করছে। এ অবস্থায় চারঘাটসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার হাজারো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কাজ চলমান থাকায় ধুলাবালিতে ধূসর হয়ে থাকে সড়কটি। এতে বিপাকে পড়ছে স্থানীয়রা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে ওই মহাসড়কের চারঘাটের ২০ কিলোমিটার অংশে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পিচ-পাথর তুলে ফেলা হয়েছে। নতুন করে পাথর ও বালু ফেলা হয়েছে। কিছু অংশ রোলার করে ফেলা রেখেছে দীর্ঘদিন। এতে সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ছোট-বড় পাথর। যানবাহন চলার সময় পুরো সড়ক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
মোটরসাইকেল চালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসার কাজে আমাকে প্রতিদিন ঈশ্বরদী পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু সড়কের সংস্কারকাজ চলায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটিতে যানবাহন চললে এত বেশি পরিমাণ ধুলা ওড়ে যে, গাড়ি চালানোর সময় সামনে কিছু দেখা যায় না। সড়কে পানি দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকমতো তা দেওয়া হয় না।
স্থানীয় নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বারবার বলছি আপনারা সড়কের কাজ সময়মতো শেষ করুন। অথচ শুরুতে গতি থাকলেও এখন কাজ চলছে ধীরে। সড়কের বাঁকগুলোও সোজা করা হয়নি। এ অবস্থায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।’ কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের হিসাবরক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কাজে ধীরগতি নেই। আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি, যাতে জনগণকে দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পোহাতে না হয়। ধুলার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে যথাসম্ভব রেহাই দিতে আমরা প্রতিদিন বেশ কয়েকবার রাস্তায় পানি দিচ্ছি।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ মো. আসিফ বলেন, স্থানীয় জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, এটা সঠিক। সড়কের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল আগামী ডিসেম্বরে। তবে মাঝখানে কিছুটা সময় পাথরসংকটে কাজে ধীরগতি ছিল। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। এ জন্য নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে না। তবে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এতে কাজ শেষের মেয়াদও বাড়বে।