নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি:
নতুন জামা-জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে দুই শিশুসন্তান তাহমিদা আক্তার (৯) ও মুর্শিদা আক্তারকে (৭) নিয়ে বাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয় মা আরিফা আক্তার। তবে বাজারে না গিয়ে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঝাঁপ দেয় নদীতে। এতে এক শিশু সন্তান তাহমিদা আক্তার জীবিত উদ্ধার হলেও পানিতে তলিয়ে যায় মা আরিফা আক্তার ও তার আরেক কন্যা মুর্শিদা আক্তার।
বুধবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের শীতলক্ষ্যা নদীর নীজামউদ্দিন খেয়া ঘাট থেকে শিশু তাহমিদা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
এর আগে গত ১৯ জুন রোববার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয় আরিফা আক্তার। আরিফা আক্তার কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের মৃত আবদুল মালেকের মেয়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাধবদীর বঙ্গারচর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার নিজাম উদ্দিন ঘাটে একটি লাশ ভেসে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে নৌপুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
এ সময় লাশটির পরিচয় শনাক্ত করতে গিয়ে জানা যায়, গত তিনদিন আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়ন এলাকায় দুই মেয়েকে নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ছিলেন আরিফা আক্তার নামে ওই মা। পরে স্থানীয়রা তাহমিদা আক্তার নামে এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও নিখোঁজ ছিলেন মা আরিফা আক্তার ও ছোট মেয়ে মুর্শিদা আক্তার। সে সময় কাপাসিয়া উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুই দিনব্যাপী উদ্ধার কাজ চালিয়েও তাদের কোনো সন্ধান পায়নি।
আরিফা আক্তারের বড় ভাই হেদায়েত উল্লাহ জানান, আরিফা আক্তার বিয়ের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে তার স্বামীর বাড়িতে থাকত। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে সে বাবার বাড়িতে চলে আসে। স্বামী মারা যাওয়ার শোক সইতে না পেরে ধীরে ধীরে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অনেকসময় তাকে শিকলবন্দি করেও রাখতে হতো। কিন্তু এ রকম কাজ করবে কখনও ভাবিনি। মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরা তাহমিদা আমাদেরকে জানিয়েছে তাদের মা নতুন জুতা ও জামা-কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে তাদেরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। পরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে পৌঁছে তাদের নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। তবে মায়ের হাত ফসকে গেলে তাহমিদা নদীতে থাকা একটি বাঁশের মাচা ধরে ভেসে থাকে। পরে স্থানীয় জেলেরা তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বঙ্গারচর নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) তরিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধার শিশু মুর্শিদার আক্তারের মরদেহটি তার মামা হেদায়েত উল্লাহর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।