নরসিংদী প্রতিনিধি :
মোটরসাইকেলই কাল হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনের জীবনে। মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে বাধা দেওয়ায় তাকে হত্যা করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় পেশাদার ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। দীর্ঘ ৫ বছর মামলা সাক্ষ্য গ্রহন শেষে নরসিংদীতে চাঞ্জল্যকর ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন হত্যা মামলায় ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। একই সাথে দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করা হয়।
বুধবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামিমা পারভিন এই রায় প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দুইজন আসামী কারাগারে বন্দি আছে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামীরা হলো- বি-বাড়ীয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের আ. করিমের ছেলে নুরুল আমিন ওরফে রাহুল, একই গ্রামের আলকাস মিয়ার ছেলে মো. কাউসার মিয়া, ভাটেরচর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. হৃদয় মিয়া, দুলালকান্দি এলাকার আওয়াল মিয়ার ছেলে মাহিন একই গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে রাকিবুল ইসলাম শুভ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার দড়িচন্ডিবের গ্রামের জসিম উদ্দিরে ছেলে সুমন ওরফে সুন্দর সুমন, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আশ্রাব উদ্দিন ওরফে শাকিল, একই উপজেলার সাহেরচর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে রিপন, নোয়াকান্দি গ্রামের মহাজ উদ্দিনের ছেলে সাইদুর ও বেলাব ভাটেরচর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে রুবেল।
এদের মধ্যে মাহিন ও রাকিবুল ইসলাম শুভ কারাগারে বন্দি রয়েছে। বাকিরো পলাতক আছে। আদালত সূত্রে জানায়, নিহত আলামিন প্লান ভিউ কনন্সালটেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারর্স ফার্ম এর সহকারী প্রকৌশলী কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৬ আগষ্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে আল আমিন নরসিংদী ডিসি রোড়ের স্টেডিয়াম সংলগ্ন প্লান ভিউ কনন্সালটেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারর্স কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়ী বেলাবতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত আলামিন বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি খাইল্লা বন্দেরচকের সন্নিকটে প্রথম ব্রিজের সামনে পৌছলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা আলামিনের গতিরোধ করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। এতে তিনি বাধা দিলে ছিনতাইকারী ডাকাতদলের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ পাশ^বর্তী একটি জমিতে ফেলে রেখে তার ব্যাবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এঘটনায় নিহতের পিতা নাজিম উদ্দিন মোহন বাদি হয়ে বেলাব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহতের পিতার করা মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ১১ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহনের পর আসামীরা দোষি সাব্যস্ত হলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ১০ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। একই সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়। অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন।
এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিহত আল আমিনের মামা ইঞ্জিনিয়ার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের আশা ছিল হত্যাকারিদের ফাঁসি দেয়া হবে। আদালতের বিচার-বিশ্লেষণে অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে বিজ্ঞ বিচারক। তবে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে আমরা উচ্চ আদালতের দারস্ত হবো।
বাদি পক্ষের আইনজীবি এ্যাড. খন্দকার হালিম বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা রাখছি পুলিশ পলাতক ৮ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের রায় কার্যকর করতে ভুমিকা রাখবে।