আবুল কাশেম, নরসিংদী থেকে:
নরসিংদীর মেঘনা নদী বর্তমানে কচুরিপানার দখলে। আর এই নদী কচুরিপানার দখলে থাকায় নৌ চলাচলে বিঘ্নসহ প্রায়ই বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে প্রায় সময়। ফলে দূর্ভোগসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জেলার চরাঞ্চলবাসীর জীবনযাত্রা অনেকটাই থমকে গেছে। এ অবস্থায় নরসিংদীর সাথে সদর ও রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলসহ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্চারামপুরের সাথে যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রবিবার (২১শে এপ্রিল) দুপুরে আলোকবালী আব্দুল মান্নান চৌধূরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন, বাখর নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুজ্জামান, আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ চৌধুরী সহ এলাকার বেশ কয়েকজন স্ব শরীরে উপস্থিত থেকে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সরেজমিনে নরসিংদীর মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদী থানাঘাট হতে করিমপুর অন্যদিকে সুইচগেইট এলাকা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীপথ দখল করে নিয়েছে ভাসমান কচুরিপানা। এতে নরসিংদীর সাথে সদর উপজেলার ৪টি এবং রায়পুরা উপজেলার ৮টি চরাঞ্চলসহ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবীনগর ও বাঞ্চারামপুর উপজেলা নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গত বেশ কয়েকদিন ধরে ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলবাসি। দুইএকটি ইঞ্জিনচালিত নৌযান মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও সেগুলো কিছু দূর যেতে না যেতেই ঘন কচুরিপানা স্তুপে আটকা পড়তে দেখা যায়। শুধু তাই নয় অনেক কষ্টে এই ঘন কচুরিপানা স্তুপ ঠেলে নরসিংদী আসলেও ঘাটে ভীড়তে পারে না। কচুরিপানা আধিক্যের কাছে হার মেনে মাঝ নদীতে নোংঙ্গর ফেলতে দেখা যায়। সেখান থেকে দীর্ঘ বাঁশের মাঁচায় চড়ে পায়ে হেটে ঘাটে উঠতে হয় চরবাসীদের।
ভুক্তভোগি চরাঞ্চলবাসীরা জানান, চরবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য, ঔষধ, কাচাঁ মালের সিংহভাগই আসে নরসিংদী থেকে। নৌকা যোগে এসব আনতে মারাত্মক দুর্ভোগের স্বীকার পোহাতে হচ্ছে তাদের। নদীর বুক জুড়ে ভাসমান কচুরিপানা থাকায় লঞ্চ, স্টিমার, ইঞ্চিন চালিত নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটাসহ ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। ইতোমধ্যে নরসিংদী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি কয়েক’শ স্পিডবোর্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় লোকজন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারছেনা। আগে যেসব স্থানে যেতে সময় লাগত এক ঘন্টা এখন সেখানে যেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা তারও বেশী সময় ব্যায় হচ্ছে।
জানা যায়, ভাসমান এসব কচুরিপানার উৎস হচ্ছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ মাছের ঘের। আর ওইসব ঘেরের কচুরিপানা বাতাসে এসে জমা হয় নরসিংদী নদীবন্দরে। প্রতি বছরই এ সময়ে নরসিংদীর মেঘনা নদী দখল করে নেয় ভাসমান এই কচুরিপানা। ফলে প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে চরাঞ্চলসহ নৌপথে যাতায়তকারিদের।
রমজান মিয়া নামে ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি বলেন, “ইদানিং কচুরিপানার পরিমাণ এতোটাই বেড়েছে যে গত ২০/২৫ দিন ধরে আমরা নরসিংদী যেতে পারিনা অর্ধেক পথে করিমপুর যাত্রি নামিয়ে দিতে হয়। গত কয়েকদিন ধরে আলোকবালী, শ্রীনগর মোড় এলাকা থেকে নরসিংদীর বিবিসার ঘাট প্রায় এই দুই কিলোমিটার মধ্যে নৌকা চলাচল অনেকটা বন্ধ রয়েছে। দুই একটা নৌকা নরসিংদী কষ্টে পিষ্টে নরসিংদী পর্যন্ত গেলেও ঘাটে ভীড়া সম্ভব হয়না। মাঝ নদীতে যাত্রী নামাতে হয়।”
কুডু মিয়া নামে অপর এক মাঝি জানান, কচুরিপানার কারনে ঠিকভাবে নৌকা চালাতে পারেনা তারা । একটু পরপরই ভাসমান কচুরিপানার স্তুপে আটকে যায় নৌকা। এসময় লগি বৈঠা দিয়ে আটকে যাওয়া নৌকাকে মুক্ত করতে হয়। তাছাড়া যে গতিতে নৌকা চালায় তারা কচুরিপানার কারণে সেই স্বাভাবিক গতিতে চলাতে পারে না তারা। এতে গন্তব্যে পৌছতে নিদ্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দুই তিন গুণ বেশী সময় লেগে যায়।
স্পিডবোর্ট চালক রুবেল মিয়া বলেন, “বর্তমানে নদীতে কচুরিপানা এতোটাই বেড়েছে যে বোর্ট চালানো বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দুইচার জন পেটের তাগিদে বোর্ট চালালেও করিমপুর থেকে যাত্রী উঠানামা করাই। এর আর সামনে আমাদের যাওয়া সম্ভব হয়না।
“কাজির কান্দি আদর্শ একাডেমির প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন,আমাদের এলাকা থেকে অনেক কৃষি ফসল নরসিংদী হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এই কাঁচামাল নিয়ে অনেক সময় নদীতে কচুরিপানার জন্য আটকে থাকতে হয়। তারজন্য ন্যয্য মূল্যও পাওয়া যায় না এবং নৌকা যথাযথ ঘাটে প্রবেশ না করতে পারায়,, সবজি নামাতে অনেক খরচ বেড়ে যায়৷
এ ব্যাপারে চরাঞ্চলের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কচুরিপানার ছবি ও ভিডিও, পোস্ট করে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিসহ এলাকার লোকজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।