প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গবাদিপশুর মধ্যে ভয়াবহ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি)। গত ১মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় মারা গেছে প্রায় ২শতাধিক গরু। ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে মৃত্যুহার কম হলেও এবারে মহামারি আকার ধারণ করছে এ উপজেলায়।
এছাড়া এ রোগের কারণে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশুর চামড়া অনেকটাই অকার্যকর হয়ে যায়। আবার গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছোট-বড় খামারিরা।
এদিকে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউানিয়নের বেসরকারিভাবে প্রায় ৭হাজার খামারে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মন্দির মৌজার আঃ হকের ১টি গাভী, মনঃস্বর মৌজার রতনের ১টি বাছুর, সুখদেব মৌজার রেজাউল মাষ্টারের ১টি গরু, মোশারফ হোসেনের ১টি গরু, লাভলু মিয়ার ১টি গরু, মিজানুরের ১টি গরু, নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন মৌজার মজিবর রহমেনের ১টি গরু, বিমল চন্দ্রের ১টি গরু, আঃ সোবহানের ১টি গরু, বিমল মহন্তের ১টি গরু, চাকিরপশার ইউনিয়নের রতœ দুগ্ধ খামারের ১টি গরু, বালাটারি গ্রামের সহিদুল ইসলামের ১টি গরু মারা গেছে। এছাড়া চাকিরপশার, বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, উমর মজিদ, নাজিমখান, ছিনাই ও রাজারহাট সদর ইউনিয়নের প্রায় ২শতাধিক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এদিকে প্রায় প্রতিটি খামারে ৪/৫টি করে গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
দুলাল দুগ্ধ খামারের দুলাল মিয়া, শিব শংকর দুগ্ধ খামারের শংকর রায়, রত দুগ্ধ খামারের রতন, মজিবর দুগ্ধ খামারের মজিবর রহমান, রেজাউল দুগ্ধ খামারের রেজাউল ইসলাম মাষ্টারসহ অনেক খামারী বলেন, রাজারহাট উপজেলায় প্রায় ৫থেকে ৭হাজারের মতো ছোট বড় গরুর খামার রয়েছে। এতে দেড় লক্ষাধিক ছোট বড় গরু রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাড়িতে ৫টি করে দেশী গরু রয়েছে। আগে বর্ষাকালে খুরা রোগ দেখা দিতো, কিন্তু গত ৫/৬বছর ধরে লাম্পি স্কিন রোগ নতুন করে দেখা দিয়েছে। এ রোগের প্রাদূর্ভাব হওয়ায় খামারিরা বিপদে রয়েছেন। কোন ওষধ কাজ করছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও তেমন কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে গ্রাম্য পশু ডাক্তারদের শরনাপন্ন হতে হচ্ছে। কিন্তু তারাও তেমন ওষধ দিচ্ছে না। শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, নিমপাতার রস ছাড়া কিছু দিতে পারছে না। লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে খামারকে মুক্ত রাখা না গেলে এই অগ্রযাত্রায় বিঘ ঘটতে পারে। গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খামারিরা। এর কোনো সঠিক প্রতিষেধক না থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে খামারিরা। লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ।
বুধবার (১২জুলাই) রাজারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজার রহমান বলেন, রাজারহাট উপজেলায় সরকারি হিসেবে প্রায় ৬শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে খামারীরা দুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। কিছু কিছু খামারে গরু মোটাতাজা করণও করা হয়। কিন্তু লাম্পি স্কিন ডিজিজ এখন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। যারা আক্রান্ত গরু আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন তাদের আমরা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া এ রোগটি ডেঙ্গু রোগের মতো মশা মাছি এবং সুচ দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। সেকারণে আক্রান্ত গরু অবশ্যই আলাদা করে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। লাম্পি স্কিন রোগ সামাজিক আন্দোলন করে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ, নিমপাতার রস, আদার রস, লবন খাওয়ানো যেতে পারে। এবারে বড় গরুর চেয়ে বাছুরগুলো বেশী মারা যাচ্ছে। তবে আমাদের কাছে সব গুলোর তথ্য নেই। আমরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি।