নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধিঃ
আমন ধান রোপণের জন্য সাধারণত ৪শ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। তবে এবছর সেই পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়েই ধান রোপণ করতে হয়েছে কৃষকদের। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মাঠে মাঠে এখন রোপা আমন ধান শোভা বিস্তার করেছে। চারদিকে শুধুই সবুজ আর সবুজ। সবুজ ধান ক্ষেতের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। যতদূর দুচোখ যায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমন ধান ক্ষেত যেন সবুজ বিছানা বিছিয়েছে। এমন দৃশ্যে মনটা পুলকিত হয়, শিহরণ জাগে প্রাণে। হৃদয়ে জাগ্রত হয় সুখের স্পন্দন। স্বপ্নে বিভোর কৃষককূল। নিজ সন্তানের চেয়েও যেন বেশি মায়া পড়ে গেছে ধান ক্ষেতে। আর তাইতো যত্নের কোনো কমতি নেই, নেই কোনো অবহেলা। প্রতিনিয়ত স্বপ্নের দোলাচল। বাৎসরিক বাজেটও আঁকা হয়ে গেছে মনের ক্যানভাসে। যত্নে করা ধান গাছগুলোর প্রতি চোখের কড়া নজর কৃষকদের। ভালো ফলনের আশায় বুকে স্বপ্ন বোনা কৃষকেরা ধান ক্ষেতের সঙ্গেই থাকছে পুরোটা সময়। কোনো ভাবেই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় অতি যত্নে গড়ে তোলা সাধের স্বপ্নগুলো। এখন শুধুই অপেক্ষা কবে, কখন আর কোনো সময় সবুজ ধান গাছগুলো সোনালী রং ধারণ করবে? কাঙ্খিত সেই লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন সারথী সোনালী ধান বাড়িতে আসবে, মৌ মৌ গন্ধে কৃষাণ-কৃষাণীরা ব্যস্ত হয়ে উঠবে লালিত স্বপ্নের প্রত্যাশা পূরণে।
রোপা আমনের চাষাবাদ সম্পর্কে পলাশ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পলাশ উপজেলায় রোপা আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫ শত ৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৫ হেক্টর, উফশী ৩ হাজার ২শত হেক্টর ও অন্যান্য ৩ শত ৬৫ হেক্টর।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের সরকারচর গ্রামের কৃষক আবদুল হেকিম জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি ছিলোনা। সেচ দিয়ে ৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন রোপণ করেছি। এতে খরচ হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৬ হাজার টাকা বেশি।
জিনারদী ইউনিয়নের পারুলিয়া কুমার পাড়ার কৃষক নিতাই চন্দ্র পাল জানান,সময় মতো বৃষ্টি না হওয়া এবং টাকা না থাকার কারণে সবগুলো জমিতে ধান রোপণ করতে পারিনি। মৌসুমের শেষে ভাদ্র মাসের বৃষ্টিতে রোপণ করেছি। তার পরও আশা করি ফলন ভালো পাবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু নাদির এস এ সিদ্দিকী বলেন, এবার আমন মৌসুমে ১শ ভাগের কাছাকাছি লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে পারবো বলে আশা করছি। কৃষি জমি কিছু অকৃষি খাতে যাওয়ার কারণে আমাদের লক্ষ্য মাত্রা কিছুটা কমে গেছে। আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তিগুলো হলো এ ডাব্লিউ ডি, পাচিং, লাইনলগো পদ্ধতি, জৈব সার প্রয়োগ। এই পদ্ধতিগুলো সহ সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বেশ কিছু প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সৌর শক্তি, পানি সেচ শিল্প বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কৃষি চাষ পদ্ধতির বিষয়ে কৃষকদের উঠান বৈঠক ও পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে প্রান্তিক কৃষকেরা এর সুফল ভোগ করতে পারে। আশা করছি এ বছর এই উপজেলার কৃষকেরা ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে লাভের মুখ দেখবে।