গাজী মামুন, লালমাই (কুমিল্লা):
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অর্থনীতিতে একসময় বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় সেটি আমরা খুঁজে পেতাম না। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ বছরে অর্থনীতির সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। আগামীতে বাংলাদেশকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিতে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার দত্তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নলেজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, একসময় কুমিল্লার অনেক সুনাম ছিল, এখনও আছে। আমার রেখে যাওয়া কাজগুলো আগামীতে তরুণ প্রজন্মকে করতে হবে। আমি অসুস্থ্যতার কারণে আপনাদের ভালোমতো দেখাশুনা করতে পারিনি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। পিতা-মাতার সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আল্লাহর সঙ্গে যেভাবে কথা বলেন সেভাবে পিতা-মাতার সঙ্গে কথা বলবেন। প্রতিবেশীর হক নষ্ট করবেন না। তাদের খোঁজখবর নেবেন।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ নলেজ পার্কের মাধ্যমে সমগ্র কুমিল্লার ছেলে-মেয়েরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে কুমিল্লাকে এগিয়ে নেবো।’
সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘কুমিল্লার অনেক স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই তরুণ-তরুণীদের যদি আমরা আইটিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে এই অঞ্চলের অর্থনীতির ইকোসিস্টেমে আমূল পরিবর্তন আসবে।’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। এ অঞ্চলের তরুণ-তরুণীদের এ নলেজ পার্কে হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজিব ভাইয়ের পরামর্শে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে ১৩ হাজার কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছি। দেশকে উন্নত রাষ্ট্র গড়তে হলে আমাদের সন্তানদের প্রযুক্তিতে এগিয়ে আনতে হবে।’ আগামী অক্টোবরে শেখ কামাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন হলে, সেখানে ট্রেনিং শুরু হবে। প্রতিবছর এক হাজার ছেলে মেয়ে প্রশিক্ষণ পাবে। এই এক হাজার ছেলেমেয়ে ডিজিটাল কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এর সঙ্গে ফ্রিল্যান্সাররা বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। শুধু একটি ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে অনলাইন মার্কেটিংয়ে কাজ করতে পারবে। আর ভালো ট্রেইনারদের উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো উদ্যোক্তা তৈরির জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে সহযোগিতা প্রদান করব।
তিনি আরো বলেন, এ নলেজ পার্কে এসব সুবিধা পাবে লালমাই তথা কুমিল্লাবাসী। বলতে গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়াই এ সরকারের কাজ। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কুমিল্লায় শেখ রাসেল ডিজিটাল আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই সঙ্গে সাড়ে তিন হাজার স্কুল, কলেজ ও ভূমি অফিসে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড দ্বারা সকল ইন্টারনেট সুযোগসুবিধা দেওয়া হবে। আজ থেকে ১৪ বছর আগে লালমাই উপজেলার মানুষ কি চিন্তা করেছে একটা আধুনিক আইসিটি সেন্টারের কথা? এখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করেছেন বাংলাদেশের শক্তি দুটি। একটি হলো বাংলার মাটি, আর অন্যটি হলো বাংলার মানুষ। এ দুটি শক্তি কাজে লাগিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি ডিজিটাল দেশ থেকে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত করবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিএসএম জাফরউল্লাহ, তথ্যপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া, কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাই-টেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়) প্রকল্পের পরিচালক এ কে এ এম ফজলুলসহ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নলেজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তরের দত্তপুর মৌজায় ৭ দশমিক ৮৮ একর জায়গায় এই নলেজ পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে প্রায় ১০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৩০০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।